প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ "সংস্কার রোডম্যাপ" ঘোষণা করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে একটি "সংস্কার রোডম্যাপ" ঘোষণা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর ২৫তম বার্ষিক 'রুল অব ল' সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
**সংস্কারের মূল লক্ষ্য: স্বাধীনতা ও দক্ষতা**
প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে বলেন, "৪২ লাখের বেশি মামলার জট, বিচার বিভাগের প্রতি অবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন ও আধুনিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।" তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিপ্লবের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই সংস্কার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।
**ইউএনডিপির সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা**
বিচারিক সংস্কারে ইউএনডিপির প্রযুক্তিগত সহায়তার কথা উল্লেখ করে ড. রেফাত বলেন, "ডিজিটাল রূপান্তর, সততা নিশ্চিতকরণ এবং জনকেন্দ্রিক বিচারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নে আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছি।" দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞদের সাথে ইউএনডিপি-সমর্থিত ট্রানজিশনাল ন্যায়বিচার বিষয়ক আলোচনাকে তিনি একটি মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
**বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আইনের শাসন**
প্রধান বিচারপতি জাতিসংঘ সনদের মূলনীতির আলোকে "সবার জন্য ন্যায়বিচার, মানবাধিকার রক্ষা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা" এর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "স্বৈরাচারী শাসন থেকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগই হচ্ছে মূল ভিত্তি।"
**চ্যালেঞ্জ ও আশাবাদ**
৪২ লাখ মামলার জট কাটাতে ডিজিটাল কোর্ট সিস্টেম এবং বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, "যখন ন্যায়বিচার ব্যর্থ হয়, তখন তা রাস্তায় প্রতিবাদে রূপ নেয়। আমাদের সংস্কার বাংলাদেশের জনগণের জন্য আশার বার্তা বয়ে আনবে।"
**সম্মেলনের অন্যান্য তাৎপর্য**
এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ বিচারক, আইনবিদ ও মানবাধিকার কর্মীরা অংশ নেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সংস্কারকে তারা একটি "রোল মডেল" হিসেবে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
**সামনের পথ**
প্রধান বিচারপতির এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইউএনডিপি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা চলমান থাকবে। আগামী ৬ মাসে বিচারিক প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশন এবং মামলার নিষ্পত্তির হার বাড়াতে কয়েকটি পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই সংস্কার একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জনগণের আস্থা অর্জন এবং একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলাই এখন মূল লক্ষ্য।
প্রতিবেদন: বোল্ড ট্রিবিউন রিসার্চ ডেস্ক
সূত্র: বাংলাদেশ টাইমস, ইউএনডিপি প্রেস ব্রিফিং, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য।
